নিজস্ব প্রতিবেদক(ময়মনসিংহ)ঃ ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
এই প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট, কালভার্ট ইত্যাদি সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কাজ না করেই বা নামমাত্র কাজ করে প্রকল্পের পুরো টাকা উত্তোলন করে নেওয়া হচ্ছে।
এ রকম ৩টি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে নান্দাইল উপজেলার ৮নং সিংরইল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং ওই তিনটি প্রকল্পের সভাপতি মোঃ কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে।
প্রকল্পের অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের কারনে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
ওই অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, নান্দাইল উপজেলার ৮নং সিংরইল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের মোট তিনটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্প গুলি মিয়া হোসেন মাষ্টার সাহেবের বাড়ি থেকে নরসুন্দা নদী পর্যন্ত খাল খনন যার ব্যায় ধরা হয় ২০০০০০/ (দুই লক্ষ) টাকা ও সিংরইল বাজার হতে ভাটিপাড়া পর্যন্ত রাস্তা মেরামত যার ব্যায় ধরা হয় ১২২০০০/ (এক লক্ষ বাইশ হাজার টাকা) এবং কোনাডাংগর হতে পূর্ব নদীর পাড় ব্রীজ পর্যন্ত সংস্কার যার ব্যায় ধরা হয় ২০০০০০/ (দুই লক্ষ) টাকা।
উক্ত তিনটি প্রকল্পের সভাপতি বর্তমান ইউপি সদস্য মোঃ কামাল হোসেন সঠিক ভাবে কাজ না করে সমুদয় টাকা আত্মসাত করেছে। ওই অভিযোগ পত্রে আরো উল্লেখ করা হয় যে কোন সংস্থার মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্ত করা হলে আত্মসাতের বিষয়টি প্রমানীত হবে।
প্রকল্পের সভাপতি কামাল হোসেন ৮নং সিংরইল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য এবং পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগে নান্দাইল উপজেলা কমিটির স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন সক্রিয় সদস্য। ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা সহ বেশীর ভাগ নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও কামাল হোসেন এলাকার ঘুরে বেড়াচ্ছে আগের মতই এবং তার সকল অপকর্ম, দুর্নীতি,অনিয়ম কোনটাই কমেনি বরং কিছু ক্ষেত্রে তার বেপরোয়া গতি বেড়েছে।
এলাকার অনেকেই অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন কাজের কমিশনের জন্য তিনি বিভিন্ন জনকে ফোনকল দিয়ে হুমকি দেন।
এই তিন প্রকল্পের বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরেজমিনে কাজ দেখে বিল প্রদান করা হয়েছে। হ্যাঁ, অভিযোগ যেহেতু উঠেছে তাই এই তিনটি প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে কাজের গুণগত মান যাচাই করা হবে এবং যদি কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে তা খুঁজে বের করা হবে। অনিয়ম বা দুনীতি ধরা পড়লে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
এ ব্যাপারে প্রকল্পের সভাপতি কামাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রকল্প গুলির কাজ শত ভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তারপরও কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছে। আজ পিআইও সাহেবের প্রকল্প এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে আসার কথা ছিলো। কিন্তু তিনি দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়ার কারনে আসতে পারেননি। তিনি আগামীকাল পরিদর্শনে আসবেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, আপনারা সাংবাদিক চাইলে আপনারাও প্রকল্প গুলি পরিদর্শন করতে পারেন। আপনারা সরেজমিন প্রকল্প গুলি ঘুরে দেখলে বুঝতে পারবেন প্রকল্প গুলিতে কাজ হয়েছে কি না।
সুশীল সমাজ ও এলাকাবাসী বলছেন, এসব অনিয়ম পূর্বপরিকল্পিত। স্বচ্ছ তদন্ত না হলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের দুর্নীতি চলতেই থাকবে। প্রকল্পের টাকা যদি মাঠে কাজে না লাগে, তাহলে এমন প্রকল্পের মানে কী? কাবিটা ও টিআর প্রকল্পে অনিয়মের মাত্রা এতটাই প্রকট যে,এটি একটি বৃহৎ দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে এই দুর্নীতি স্থানীয় প্রশাসনের ওপর আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, উচ্চমহল থেকে আদৌ তদন্ত হয় কিনা, না কি আবারও কোন কালো হাতের ইশারায় ফাইল চাপা পড়ে যাবে।